সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আরিয়ান হোসেন ঋতুর বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের নামে থাকা জন্ম মৃত্যুর নিবন্ধন আইডির পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এবং স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিধি বহির্ভূতভাবে বহিরাগতদের ওই ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার পাইকুরাটি ইউনিয়নের ইউপি সচিব একে এম রুহুল আমিন এ নিয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামানকে কমিটির প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ইউএনও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হিসেবে আরিয়ান হোসেন ঋতু মিয়া (২৩) গত ৬/৭মাস ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ওই ইউনিয়নের থানুরা গ্রামের বাসিন্দা অয়াজ আলীর ছেলে।
একই সঙ্গে কাজ করার সুবাদে তিনি পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের নামে থাকা জন্ম মৃত্যুর নিবন্ধন আইডির পাস ওয়ার্ডটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এই সুযোগে ওই উদ্যোক্তা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের নামে থাকা আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এবং তাদের দুজনের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অন্য ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগের এবং রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাইকুরাটি ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে আসছেন বলে এলাকায় অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার সাবেক এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে এই খবরটি জানতে পারেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। পরে ওই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাংবাদিকরা অবগত করেন। ইউএনও বিষয়টির খোঁজ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জানানোর জন্য পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে মুঠোফোনে নির্দেশ দেন।
ইউপি সচিব ওইদিন তার নামে থাকা জন্মমৃত্যু নিবন্ধন আইডিতে ঢুকে পরীক্ষা করে দেখতে পান যে, বহিরাগত বেশ কিছু নাম ও ঠিকানা দিয়ে পাইকুরাটি ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে।
পাইকুরাটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আরিয়ান হোসেন ঋতুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার ব্যবহূত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পাইকুরাটি ইউপি সচিব একে এম রুহুল আমিন বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান ও আমার নামে থাকা জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন আইডিটির পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এবং আমাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আমাদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা বিভিন্ন জেলার ৫০ থেকে ৬০ জন বহিরাগতদের আমাদের ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে জন্মনিবন্ধন করিয়েছেন।
তার মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিক ও থাকতে পারে, আমি শিউর হয়ে বলতে পারছি না। সবকিছু আমার কাছে তিনি স্বীকার করেছেন। এমনকি তিনি ভবিষ্যতে আর এমনটি করবেন না বলেও আমার কাছে অঙ্গীকার করেছেন। আমি এ ঘটনায় ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
ইউএনও শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টিএইচ